জোসনা রাতের বাঁশি

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

এনামুল হক টগর
  • 0
  • ১৭
চারিদিকে নি¯—ব্ধ সুনশান। বকুলের গন্ধ থেকে বিরহের অশ্র“ ঝরে যাচ্ছে, উজ্জল ন¶ত্রের আকাশ ভেদ করে মধুময় কোকিলের গান ভেসে আসছে। আপোষহীন দীর্ঘ যৌবন তৃষ্ণার ভেতর দিয়ে প্রস্ফুটিত গোলাপ থেকে নতুন পাঁপড়িগুলো ধীরে ধীরে লাল হচ্ছে। ছমছমে আঁধার ভেদ করে ভাঙা চাঁদ জেগে উঠছে। পাখিদের ডানার শব্দ উল­াসে।
সোলায়মান বাঁশি হাতে হেঁটে যাচ্ছে। শুক্ল প¶ের ¶ুধার্ত রাতের জোছনা বুকে নিয়ে মাশুমদিয়া গ্রামের শেষ মাথায় পদ্মা আর যমুনার মোহনায়। অবারিত অজস্র এক ¯^প্নের জগৎ যেন অনাবৃত অনš— আকাশকে ঘিরে আছে।
শারমিন দূর গ্রামে চাঁদের সাথে জেগে আছে, কখন সোলায়মানের বাঁশি বেজে উঠবে আকুল প্রেমের প­াবনে। সোলায়মান মোহনার বুকে গিয়ে দাঁড়ায়। অই দূর গ্রামের দিকে স্থির দৃষ্টি মেলে। বালিকা কিশোরী জেগে আছে বেদনার বিরহে।
সোলায়মান বাঁশিতে সুর তোলে। আর বাঁশির সুর ভেসে যায়...শারমিনের কানে। শারমিন সুরের ভেতর শুনতে পায়, আমার মনের ঘরে খুঁজে দেখি তোমার ঠিকানাÑ।
শারমিনের তীব্র অনুভুতির শুভ্রতা জেগে ওঠে জীবনের ভেতর এক রাত্রির ন¶ত্র-রা জেগে আছে সোলায়মানের বাঁশির সুরে কখন পৃথিবীর নতুন সকাল জেগে উঠবে। শারমিনের বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। সে শুধু একা জেগে। নিঃশব্দ নিশীথ রাতের বাঁশিতে। তৃষিত জোছনার ভেতর রাত্রির শিশির-রা পরষ্পরকে আলিঙ্গন করছে।
শারমিনের হৃদয়ে বিশাল ভালোবাসার প্রেম জেগে উঠেছে। ভূ-পৃষ্ঠের বাতাস যেন তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে সোলায়মানের কাছে। পালপণ নৌকা ঘাটে বাঁধা। তারপর প্রবল জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মোহনার দিকে। নিরব স্থির সোলায়মান বাঁশি বাজাচ্ছে। ভালোবাসার রূপাš—র প্রক্রিয়ার এক নতুন আর সনাতন সুরে। অনš—কালের কুমার-কুমারীরা জেগে উঠছে দূরদশি চৈতন্যের এক প্রত্যাশায়।
আর কতদূর ছুটে যাবে, শারমিনের সামনে মোহনার প্রবলস্রোত। বাড়ির সবাই জেগে ওঠছে। চাঁদ ডুবে যাচ্ছে দিনের আগমনে। বাঁশির সুর থেমে গেছে। কে এই অচেনা বাঁশিওয়ালা যে, শারমিনের বুকে ভালোবাসার ঢেউ তুলেছে।
সোলায়মান বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। সে বুঝেনি কেউ তাকে ভালোবেসে নিশীথের গভীরে ছুটে আসছিল। যে অচেনাকে দেখবে বলে সোলায়মান বাঁশি বাজায়। সোলায়মানের অদৃশ্য জগতে যে ভালোবাসার খেলা করে, তাকে সোলায়মান ধরতে চায়।
সোলায়মান-রা দুই ভাই। বড় ভাই বিবাহিত দুই সš—ানের পিতা। বাবার বাইশ বিঘা জমি বড় ভাই দেখা শোনা করে। সোলায়মান ভাবীকে মায়ের মতো ভালোবাসে যদিও তার মা এখনো বেঁচে আছে। তিনি বৃদ্ধা।
সোলায়মানের বয়স হয়েছে বলে বাড়ির লোকজন তার বিয়ের কথা ভাবে। কিন্তু সোলায়মানের দেহের গভীর এক অদৃশ্য অদেখা নারীর প্রেম খেলা করে। আর যেন সেকারণেই গভীর জোছনা রাতে সোলয়মান বাঁশি হাতে নদীর মোহনায় গিয়ে বাঁশি বাজায়। কিন্তু বাড়ির লোকজন এই বিষয়টি তেমন পছন্দ করে না। তাই সোলায়মানকে বিয়ে দিতে চায়।
এই ভাবে সোলায়মান মোহনায় গিয়ে বাঁশি বাজায় আর শারমিন ¯^প্নের ভেতর বাঁশির সুর শুনতে শুনতে মাঝ পথে থেকে পুনরায় আবার বাড়ি ফিরে যায়। সোলায়মানের বাড়ি থেকে নাজিরগঞ্জ বেশী দূরে নয়। নাজিরগঞ্জ শারমিনের বাড়ি। সোলায়মানের বড় ভাই ব্যবসার খাতিরে নাজিরগঞ্জ যাতায়াত করে। সেই সুবাদে একদিন বাড়ি ফেরার পথে শারমিনকে দেখে এবং মনে মনে ভাবে মেয়েটিকে সোলায়মানের সাথে বিয়ে দেবো। বাড়িতে ফিরে মেয়েটির কথা সোলায়মানের ভাবীকে বলে।
ভাবী সোলায়মানের বড় ভাইয়ের সাথে একমত হয় এবং সোলায়মানের বিয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ শুর করে। সোলায়মান ভাবীকে খুব বিশ্বাস করার কারণে তার কথা কোনদিন ফেলতে পারেনি। তাই বিয়ের ব্যাপারে সম্মতি জানায়।
কিছু দিনের মধ্যেই সোলায়মানের সাথে শারমিনের বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং শারমিনকে সোলায়মান নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। শারমিন ¯^ামীর বাড়িতে আসার পর আর কোন নিশীথ রাতে অই মোহনার কুল থেকে আর বাঁশির সুর শুনতে পাইনি।
অন্যদিকে ভাবী সোলায়মানকে কাজের সন্ধানে ঢাকা শহরে পাঠিয়ে দেয় এবং কিছু দিনের মধ্যে সোলায়মান একটি পোষাকশিল্প কারখানায় চাকুরী পায়। নতুন বৌকে বাড়ি রেখে সোলায়মানের ভালো লাগেনা। তার অš—রে সবসময় শারমিনের ভালোবাসা কাঁদে এক অগ্নিশিখার বধির আগুন তাকে ¶ত-বি¶ত করে। অমনোযাগী মন সব সময় বাড়ি ফিরে যেতে চায়। তারপরও প্রেরনার আবেগ অচেনা থেকে যায়।
এ-দিকে শারমিন বুঝতে পারে না কেন নিশীথ রাতে সেই বাঁশির সুর ভেসে আসে না। তবে কি সোলায়মানই এই গভীর প্রেমের সুর তুলে মোহনার কুলে বসে বাঁশি বাজাতো। তারপরও সেই স্মৃতিময় অতীত বাঁশির সুর শোনার জন্য শারমিনের মন নিশীথ রাতে অপে¶া করতো। কিন্তু বাঁশি আর শুনতে পেতো না। প্রবাহমান এক ধোঁয়াশার আঁধারে বাঁশির সুর যেন মুছে যেতে লাগলো। তার গোপন সত্তার আড়ালে দানা বাঁধা অদৃশ্য প্রেম-ভালোবাসা ধীরেধীরে মুছে যেতে লাগলো। এদিকে সোলায়মানের ভাবী শারমিনকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলো।
সে সোলায়মানকে জানায়, সে আর ইদানিং শারমিনকে বিশ্বাস করতে পারছে না এবং সন্দেহ করেÑ শারমিনের অন্য কোথাও প্রেম ভালোবাসা আছে। সারা দিনরাত সে মোহনার দিকে তাকিয়ে থাকে আর বাঁশির সুর খুঁজতে থাকে। কিন্তু সুর ভেসে আসে না।
কিন্তু বি¯—ৃত আকাশে মেঘগুলো ভাসতে থাকে তারপর বিরান ভুমিতে অশ্র“ ঝরায় এক সময় সবুজ ফসলে ভরে ওঠে মাঠ। ¯^প্নের ছায়ার ভেতর সোলায়মান বাঁশি হাতে শারমিনকে ডাকে এক মহৎ প্রেমের সুর তুলে।
ভোরবেলায় পাখি ডাকে উদিত সূর্যের আভায়। মাটির তৃণভূমি হাসে, ছোট নদীতে জোয়ার আসে আর ভালোবাসা আহবান করে মমতার চোখে। শারমিন চোখ তোলে জোয়ারের জলে। এক বিষন্ন উদাসীন প্রেমে।
এক সময় পরিতৃপ্ত ¯^প্ন আর বা¯—বতাকে ফেলে নিষ্ঠুর জগত। শারমিনের চলাফেরা বড় ভাই আর ভাবীর চোখে আরো বেশী সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। শারমিনকে তারা চোখে চোখে রাখে। নিশীথ রাত শারমিন ঘুমিয়ে আছে। ¯^প্নের ভেতর দেখে কে যেন মোহনায় বাঁশির সুর তুলে তাকে ডাকছে। সে সুরের কোলাহলে শারমিনের ঘুম ভেঙে যায়। তার শরীরে ভেতর জাগে এক দীর্ঘ বিরহ বেদনা।
অন্ধকার রাত্রির পথে এ-কোন প্রেমের আহবান। জোয়ার-ভাটার মতো জ্বলছে আর নিভছে। বিস্মৃতির বপনকৃত অঙ্কুরের প্রত্যাশা থেকে ভাগ্যের ইতিহাস খেলা করছে। শারমিন ছুটে যাচ্ছে মোহনার দিকে কিন্তু ধূ-ধূ মরিচিকা: কেউ নেই, কেউ নেই... পেছন থেকে ভাবী ফিরে এসে শারমিন আর বড় ভাই দেখছে ¯^ামীর কাছে চিঠি লিখলো।
প্রিয়তমা ফিরে এসো। বহুদিন ধরে এই মোহনার কুল থেকে বাঁশির সুর শুনতে পাই না আমার আকুল আকাক্স¶ালোর ভেতর যে সুর কাঁদে তা তুমি এসে শুনাও। আমাকে পূর্ণকরো তোমার ভালোবাসার প্রেমে। চিরš—র উদিত এক চিরকালের পথে, সেখানে আল­াহর ধ্বনি মানুষকে কল্যানে নিয়ে যায়। আমাদের যৌবন স্মৃতিগুলো বিদগ্ধ প্রেমে মিশে যাবে এক অগ্রজ আর অনুজের সাথে। তুমি ফিরে এসো।
তারপর শারমিন ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভেতর ভাবী আর বড় ভাই তাকে হত্যা করে। হত্যার পর তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখে এবং সোলায়মানকে খবর দেয়।
সোলায়মান বাড়িতে ফিরে আসে। ভাবী আর বড় ভাই তাকে বুঝায় শারমিন খারাপ মেয়ে ছিল। পুলিশকে বলবি কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে জানিনা। গ্রামের লোকের খবর পেয়ে সকালে পুলিশ আসে। কেউ বাড়িতে নাই, সবাই পালিয়েছে। পুলিশ ময়না তদš— শেষ করে লাশ শারমিনের ¯^জনদের কাছে দিয়েছে।
দারগা শারমিনের চিঠিটা সংগ্রহ করেছে। তদšে—র ¯^ার্থে কাউকে বলেনি। দূর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে সোলায়মান তার ভাবী আর বড় ভাই একসাথে পালিয়ে আছে। বড় ভাই আর ভাবী সোলায়মানকে বলে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বলবি, বৌ খারাপ থাকার কারণে আমি তাকে খুন করেছি। যত টাকা পয়সা লাগে আমরা দুজন তোকে বাঁচাবো, তুই একটুও ভয় পাসনা।
খুনের তদš— চলছে এক সময় সোলায়মান তার বড় ভাই আর ভাবী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং রিমান্ডে সোলায়মান বলে বড় ভাই আর ভাবীর কোন দোষ নাই। আমার স্ত্রী খারাপ ছিল তাই আমি ওকে খুন করেছি। সোলায়মানের ¯^ীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ তদš— শেষে চার্জসিট দেয় এবং চার্জসিটে বড় ভাই ও ভাবীর নাম হালকা ভাবে জড়িত করে।
বড় ভাই আর ভাবী আদালতের মাধ্যমে জামিন পায়। তারা আদালত থেকে পুলিশের তদš— রিপোর্ট তুলে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে। আইনজীবী বলে, তদš— রিপোর্ট অনুযায়ী তোমাদের দুই জনের কিছু হবে না। সাজা হলে সোলায়মানের হবে।
আইনজীবীর কথা শুনে বড় ভাই আর ভাবীর মনে শয়তানী বেড়ে যায়। মনে মনে ভাবে আমাদের যেহেতু কিছু হবেনা; সেহেতু মামলা আপোষের প্রয়োজন নেই। ভাবী মনে মনে ভাবে সোলায়মানের ফাঁসী হলে সব জমির মালিক হবে আমার দুই সš—ান। সেই ¶েত্রে মামলা চলাই ভালো।
ভাবী সোলায়মানের বড় ভাইকে বিষয়টি তেমন বুঝতে দেয় না। ইতিমধ্যে শারমিন মৃত্যুর আগে তার ¯^ামীর কাছে লেখা চিঠিটা কিভাবে যেন জেলারের কাছে আসে এবং জেলার তা পৌছে দেয় সোলায়মানের কাছে। সোলায়মান চিঠিটা পড়ে এবং মনে মনে গভীর অনুতপ্ত হয়। মমতার আত্মপ¶ প্রেম আত্মক্লাš— হয়ে ওঠে। ফুলের পুষ্পগুচ্ছগুলো ছিঁড়ে যায়। তারপর আত্মার ঐশ্বরিক সিংহাসনে শারমিন আবার বাস করতে শুর“ করে। যেখানে পৃথিবীর দুর্ভোগ ঘুমিয়ে থাকে। সৌন্দর্য আর অসৌন্দর্য স্মৃতির মিশ্রনে মানুষ মানুষের মহৎ মানবতার ভেতর।
ভালোবাসার নিশীথ রাতগুলো সোলায়মানের বুকের ভেতর জেগে ওঠে আর ইচ্ছে করে বারবার মোহনার বুকে বসে বাঁশি বাজাই। শারমিন গভীর রাতে আমার বাঁশির সুরে আবার জেগে উঠুক। একটি বিদগ্ধ ভালোবাসা বুকে নিয়ে।
সোলায়মানের প্রশ্ন জর্জিত বিধ্ব¯— হৃদয় আজ ক্লাš—। সময়ের অস্পষ্ট দাবী আজ তার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ধরেছে। তীব্র অনুভুতির এক কর“ণ যন্ত্রণায়। সেখান থেকে বিস্মৃতির ভোরবেলা জেগে উঠছে দীর্ঘ বিরহের এক প্রেমে। শারমিনের বাড়ির অবস্থাও তেমন ভালো না। কিন্তু টাকা পয়সা দিলে হয়তো মামলাটা আপোষ হয়ে যাবে।
কিন্তু সোলায়মানের ভাবী তাতে রাজি না। কারণ সোলায়মানের ফাঁসি হলে অনেক জমির মালিক হবে তার ¯^ামী-সš—ান-রা। সেই কারণে মামলাটা আপোষ না হয়ে আদালতে চলতে থাকে।
এক সময় মামলার সা¶ী হয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মামলার বিচারক রায় ঘোষণা করবে। দিন ও রাতের সাথে সাথে সময় চলে যাচ্ছে আগামী কাল, ২০ এপ্রিল সোলায়মানের মামলার রায় দেওয়া হবে।
গভীর রাত অবধি সোলায়মান গভীর চিš—ার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। পৃথিবীর বিবিধ অন্ধকার থেকে দুঃখ যন্ত্রণার এক শীতল স্পর্শ সোলায়মানকে শিহরিত করছে; যেন মাতৃত্বের পবিত্র জঠরের মতো ধৈর্যশীল এক ভালোবাসা তাকে ডাকছে। গতির অšে^ষনে আলো জ্বালিয়ে শারমিন যেন তাকে ডাকছে।
সকাল দশটার মধ্যে সোলায়মানকে পুলিশ পাহারায় আদালতে নিয়ে গেছে। সেখানে আগে থেকে তার বড় ভাই ও ভাবী এসে অপে¶া করছিল। তারা সবাই একেএকে কাঠগাড়ায় উঠেছে। নিঃশব্দ বিজ্ঞ-আদালত বিচারক রায় ঘোষণা করছেন। বড় ভাই ও ভাবী নির্দোষ প্রমানিত হয়েছে আর সোলায়মানের ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
রায় শুনে সোলায়মান নিশ্চুপ। কারো সাথে কোন কথা বলেছি। নীরবে কারাগারে ফিরে যাচ্ছে। বড় ভাই আর ভাবী বললো মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে তোর প্রাণ ভি¶া চাইবো। তুই মুক্তি পেয়ে যাবি। কোন চিš—া করিস না।
তাদের কোনো কথাবার্তা সোলায়মান কর্ণপাত করেনি। দিন যায় রাত যায় নির্ঘুম সোলায়মান জেগে থাকে সময়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রানভি¶ার আবেদন ব্যর্থ হয়ে যায়।
আজ সকালে প্রাণদন্ডের রায় সোলায়মানকে জেলার সাহেব পড়ে শুনায়। সোলায়মান বুঝতে পারে, দুই এক দিনের মধ্যেই হয়তো তার ফাঁসির আদেশ কার্যকরী হবে। পরের দিন ভোর বেলা থেকে সোলায়মানের মা জেল গেটে বসে আছে। ছেলের সঙ্গে দেখা করবে। ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। বহু বছরের বৃদ্ধ মাতা আজো বুঝতে পারেনি হার ছেলের মৃত্যু দন্ড হয়েছে।
জেলার সাহেব সোলায়মানের মাকে নিয়ে জেলার ভেতরে প্রবেশ করলো। জেলার ফাঁসির সেল থেকে সোলায়মানকে আনা হলো। বৃদ্ধ মা তেমন চোখে দেখতে পায় না। জেলার বলল মা সোলায়মান আপনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আপনি ছেলের সঙ্গে কথা বলুন।
মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বেদনার অশ্র“ঝরা চোখে বলল সোলায়মান, সোলায়মান কেমন আছিস, বাবা। বহু দিন বাড়ি যাসনি বাপ, আজ আমার সাথে বাড়ি চল। বাড়ি যাবি আমার সাথেÑ।
সোলায়মান বুঝলো মমতাময়ী মা আমার কিছুই জানে না। তাই সে মাকে শাš—ভাবে বললো, দুই এক দিনের মধ্যে আমি তোমার বাড়ি ফিরে যাবো মা, তুমি দুঃখ করো না। মা সš—ানের দেখা শেষে বাড়ি ফিরে যায়।
দিন শেষে সন্ধ্যা নেমে আসে আগামী কালের নতুন ভোর বেলা হয়তো সোলায়মানের দেখা হবে না। রাত্রি গভীর হতে থাকে। এক সময় জেলার বললো, সোলায়মান তোমার কি খাবার ইচ্ছা? সোলায়মান একটি শশা খাওয়ার খুব ইচ্ছে। আমাকে একটি শশা চিকুন করে কেটে দেবেন। আর মৃত্যুর পর আমার দেহটা আমার স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করবেন।
কৃষ্ণপ¶ের নিশীথ রাতে ভাঙা চাঁদ ধীরে ধীরে আকাশে উঠছে। সোলায়মান সেলের দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের। তন্দ্রাচ্ছন্ন চাঁদের ভেতর শারমিন তাকে ডাকছে আকাশের শেকড়ে শেকড়ে ন¶ত্রগুলো কাঁদছে। পাহাড় উপত্যকা বনভূমি আর নদীর ভেতর থেকে বেদনার সঙ্গীত ভেসে আসছে।
উজ্জলতম ন¶ত্রগুলো এসে পৃথিবীকে আলিঙ্গন করছে ভালোবাসার সুখ-দুঃখ আর যন্ত্রণাগুলো নিয়ে। আজন্ম পথিক হেঁটে যাচ্ছে অতীত পদচিহ্ন মুছে দিয়ে। এক জীবন শেষে অন্য এক জীবন সোলায়মানকে ডাকছে। ভোরবেলায় জেলার সাহেবের ফোন বেজে উঠলো, সোলায়মানের ভাবীর মোবাইলে। ওপাশ থেকে তাকে জানানো হলোÑ জেলগেট থেকে লাশ নিয়ে যান।
সোলায়মানের ভাবী বললো, লাশ আমরা নেবো না। ওকে অজ্ঞাত লাশ হিসাবে আপনারা দাফন কর“ন।
তার এই উত্তরে জেলার ভীষণ রকমের ¶িপ্ত হলো এবং সোলায়মানের ভাবীকে কড়াভাবে বললো, লাশ নিয়ে যান এবং সোলায়মানের স্ত্রীর পাশে ওকে দাফন করবেন।
অগত্যা নিমরাজী হয়ে সোলায়মানের ভাবী এসে লাশ নিয়ে গেলো এবং নিজগ্রামের কবর স্থানে ওকে দাফন করলো।
কিন্তু স্ত্রীর পাশে দাফনের শেষ ইচ্ছা টুকু তার পুরণ হলো না: তাই যেন নিয়তির ধারায় জোসনা রাতে কবরের ভারী বাতাস ছুটে যেতে লাগলো পদ্মা আর যমুনার মোহনার দিকে, হু-হু আওয়াজ তুলেÑ যেখান থেকে বাঁশি সুর ভেসে আসতো, শারমিনের হৃদয় অš—রে আমার মনের মাঝে খুঁজে দেখি তোমার ঠিকানাÑ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক টগর ভাই...গল্পের ধারাবাহিকতা ভালো লেগেছে...ফন্ট জনিত সমস্যা আর শাঝে মাঝে উপমাগুলো না হলেও চলত এমন মনে হয়েছে..েএকটু রিভিউ করে নিলে আরও ভালো হতো....
তাপসকিরণ রায় গল্পটি ভাল লেগেছে--কিন্তু মাঝে মাঝে টেকনিক্যালি শব্দের প্রমাদ্গুলি মন সংযোগের ব্যঘাত ঘটিয়েছে।গল্পের শেষটা বড় করুণ,মনে ব্যথা জাগায়।
সূর্য বাক্য গঠনে প্রচুর উপমা ব্যবহারে গল্পের স্বাভাবিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে আর তার সাথে ছিল কনভার্টজনিত ভোগান্তি। সোলায়মান মা থাকতেও ভাবীকে মায়ের মতো জানে-সেখানে ভাই ভাবী শারমিনকে কেন হঠাৎই হত্যা করবেন? তারাতো সোলায়মানকে জানানও নি শারমিনের কোন কথা আবার ভাবী হঠাৎ এমন স্বার্থপর হয়ে গেলেন জমির জন্য কোন পূর্বাভাস ছাড়াই... এই জায়গাগুলো গল্পের দূর্বলতা। সবমিলিয়ে করুণ পরিণতির গল্পটা ভালোই লাগলো।

২১ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৯৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪